কাজু বাদামের উপকারিতা : নিয়মিত কাজু বাদাম খাওয়ার যত উপকার

কাজু বাদাম ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর ।কাজু বাদাম স্বাস্থ্যকর খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি নিয়মিত খেলে শরীরে নানা রকম উপকার পাওয়া যায়। তাই খাদ্য ও পুষ্টিগুণ বিবেচনায় সবার খাবারের তালিকায় কাজু বাদাম রাখা উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, কেউ যদি নিয়মিত ১ মুঠো করে কাজু বাদাম খায় , তাহলে তার শরীরে পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি দূর হয়। সেই সাথে মেলে আরও অনেক রকম উপকার।

কাজু বাদামের স্বাস্থ্য উপকারিতা

হৃদযন্ত্র সবল রাখে

হৃদযন্ত্রের জন্য কাজু বাদাম ভালো। এই বাদামে হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী চর্বি, তন্তু, প্রোটিন আর আরজিনি নামের উপাদান থাকে, যা হৃদযন্ত্রকে সুস্থ ও সবল রাখে।

হাড় মজবুত করে

কাজু বাদামে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম আছে। কাজু বাদাম নিয়মিত খেলে শরীরে খনিজের চাহিদা পূরণ হয়। কাজু বাদামে ভিটামিন কে আছে, যা হাড়ের জন্য উপকারী।এছাড়াও কাজুবাদাম রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়।এছাড়া অস্টিওআর্থারাইটিসের মতো হাড়ের রোগ হওয়ার আশঙ্কাও কমে।

চোখের জ্যোতি বাড়ায়

কাজু বাদামে প্রচুর পরিমাণে লুটেন ও জিয়াক্সাথিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা চোখকে আলোক রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।

রক্তরোগ দূর করে

প্রতিদিন পরিমিত মাত্রায় কাজু বাদাম খেলে রক্তস্বল্পতা দূর হয়। কাজু বাদামে কপার বা তামা থাকে, যা রক্তরোগ দূর করে। রক্তে কপারের অভাব হলে লৌহ স্বল্পতাও দেখা দিতে পারে, যা রক্তশূন্যতা সৃষ্টি করে। কাজু বাদাম খেলে এই সমস্যা দূর হয়।

ওজন কমাতে

যারা ওজন কমাতে চান, তারা চর্বি ও প্রোটিন জাতীয় অন্যান্য খাবার বাদ দিয়ে কাজু বাদাম খেতে পারেন। কাজু বাদামে যে প্রোটিন আছে, তা চর্বির পরিমাণ কমিয়ে ওজন ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

হার্টের স্বাস্থ্য

কাজুবাদামে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার এবং হার্টের রোগ থেকে মুক্তি দিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কাজু বাদামে স্বাস্থ্যকর ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা দেহে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং ভালো কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায় ।

স্বাস্থ্যকর চুল

কাজুবাদামের স্বাস্থ্যগুনের পাশাপাশি কাজুবাদামের তেল মাথার ত্বকে প্রয়োগে স্বাস্থ্যকর চুল পেতে সাহায্য করে। কাজু বাদামে থাকা কপার শরীরের ভেতরে এমন কিছু এনজাইমের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়, যা চুলের রঙকে ধরে রাখতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন

কাজুবাদামে রয়েছে ওলিসিক নামে এক ধরনের মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, যা দেহ থেকে বাজে কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে দারুন কাজে লাগে। সেই সঙ্গে শরীরের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। তাই তো প্রতিনিয়ত কাজু বাদাম খেলে শরীরের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।যার কারণে হার্টের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়।তাই নিয়মিত কাজুবাদাম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে

আপনার যদি রক্তচাপের সমস্যা থাকে তাহলে আপনার কাজু বাদাম খাওয়া শুরু করতে হবে। কারণ এই বাদামে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, যা ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেকটা সাহায্য করে।

ক্যান্সার দূর করতে

যদি মনে করেন,ক্যান্সার রোগটি সাপ হয়, তাহলে এই রোগের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হলো বেজি। কারণ যেখানে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, সেখানে ক্যান্সার সেলের খোঁজ পাওয়াটা অনেক কঠিন হয়ে যায়।

কাজু বাদামে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ক্যান্সার সেলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি টিউমার যাতে দেখা না দেয় সেদিকেও খেয়াল রাখে। প্রসঙ্গত, কাজু বাদামে প্রম্যান্থো-সায়ানিডিন নামে একটি উপাদান থাকে, যা বিশেষ একটি দায়িত্ব পালন করে থাকে।তাই প্রত্যেক দিন এক মুঠো করে কাজু বাদাম খেতে বলেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা।

সংক্রমণের আশঙ্কা কমাতে

এই প্রকৃতিক উপাদানটিতে থাকা জিঙ্ক, ভাইরাসের আক্রমণের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। তাই আপনি যদি এই ধরনের ইনফেকশনের শিকার প্রায়শই হয়ে থাকেন, তাহলে প্রতিদিনের ডায়েটে কাজু বাদাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

নার্ভের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে

বাদামে থাকা ম্যাগনেসিয়াম নার্ভের ক্ষমতা বাড়িয়ে সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের শক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর ব্রেইনের পাওয়ার একবার বাড়তে থাকলে আস্তে আস্তে ব্রেনের কগনিটিভ ফাংশনেরও উন্নতি ঘটে। যার ফলে স্মৃতিশক্তি বুদ্ধি এবং মনোযোগ বৃদ্ধি হওয়া শুরু হয়।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের অভাব পূরণে

বাদাম এবং বীজ জাতীয় খাদ্যকে এন্টি-অক্সিডেন্টের ‘পাওয়ার হাউজ’ বলা হয়। কাজু বাদাম এর ব্যতিক্রম নয়। দেহের বিপাকিয় কাজে উৎপন্ন free radicals শরীরের জন্য ঝুঁকি পূর্ণ যা ক্যান্সার, হৃদরোগসহ আরো বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলে।এন্টি-অক্সিডেন্টের কাজ হলো এই free radical সমুহকে নিউট্রালাইজ করা বা প্রশমিত করা। ফলে তারা আমাদের দেহে ক্ষতি করতে পারে না।

এই বাদামে যে এন্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায় তারা হলো পলি ফেনল এবং ক্যারটিনয়েড। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, এই বাদামে উপস্থিত এন্টি-অক্সিডেন্ট দেহের ভিতর অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।

কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম

কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম বা কাজু বাদাম কিভাবে খাবেন তা জানতে হলে আগে আপনাকে দেখতে হবে আপনি কেন খাবেন? এবং কখন খাবেন?

যদি আপনি ডায়েট এর জন্য খান, তাহলে সকাল ১১-–১২ টার মধ্যে খেতে পারেন। আবার বিকাল ৪-–৫ টার মধ্যে ও খেতে পারেন। যখনি ক্ষুধা লাগবে কাজু বাদাম খেলে ক্ষুধাও চলে যাবে। আপনার ডায়েট ঠিক থাকবে।

অন্য কারণে খেলে রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ৮-–১০ টি খাবেন। কাজুবাদাম বেশি খেলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

কাজু বাদামের দাম

কাজু বাদামের দাম ভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কারণ সেটা নির্ভর করে বর্তমান বাজার মূল্য কমা বা বাড়ার উপরে।

তবে একটা নির্দিষ্ট মুল্য আছে যেটা শেয়ার বাজার থেকে নির্ধারণ করা হয়। সেই হিসাবে নিচে কাজু বাদামের দাম দেওয়া হলো।

প্রতি কেজি কাজু বাদামের দাম :

ছোট সাইজের কাজু বাদাম প্রতি কেজি – ৮৫০ টাকা
মাঝারি সাইজের কাজু বাদাম প্রতি কেজি – ১০৫০ টাকা
বড় সাইজের কাজু বাদাম প্রতি কেজি – ১২০০ টাকা

Leave a Comment